সর্বপ্রাচীন পাণ্ডুলিপিটি ১২০০ খ্রিস্টাব্দের। আরো আছে, কোরআনের কয়েক শ পাণ্ডুলিপির একটি বিশাল সংগ্রহ। যার মধ্যে ইলখানিদ, উসমানীয় ও সাফাবিদ শাসনামলের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পাণ্ডুলিপিও আছে।
প্রতিষ্ঠা : গাজি হুসরেভ বেগ পাঠাগারটি মূলত বসনিয়ার ঐতিহাসিক হুসরেভ বেগ মাদরাসারই অংশ। বসনিয়ায় নিযুক্ত উসমানীয় সাম্রাজ্যের গভর্নর গাজি হুসরেভ বেগ ১৫৩৭ সালে হুসরেভ বেগ মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করেন। মাদরাসার শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ব্যবহারের জন্যই পাঠাগারটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। ১৮৬৩ সালে পাঠাগারটি মাদরাসা ভবন থেকে স্বতন্ত্র কক্ষে স্থানান্তরিত হয়। ১৯৩৫ সালে মাদরাসার আঙিনা থেকে সারাজেভোর প্রধান মুফতির অফিসে তা স্থানান্তর করা হয়।
ধ্বংসের মুখোমুখি : ১৬৯৭ সালে অস্ট্রিয়ান জেনারেল স্যাভয়ের ইউজিন পাঠাগারে এক ধ্বংসাত্মক অভিযান চালায় এবং বহু মূল্যবান নথিপত্র, পাণ্ডুলিপি ও বই নষ্ট করে ফেলে। ১৯৯০ সালে যুগোস্লাভ যুদ্ধের সময় দ্বিতীয়বারের মতো হুমকির মুখে পড়ে পাঠাগারটি। তবে তখন গুরুত্বপূর্ণ পাণ্ডুলিপি অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়।
নবযাত্রা শুরু : ১০ বছরব্যাপী নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার পর ১৫ জানুয়ারি ২০১৪ গাজি হুসরেভ বে পাঠাগারটি আবারও খুলে দেওয়া হয়। নতুন ভবন নির্মাণে কাতার সরকার ৮.৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার অর্থ-সহায়তা করে। মার্বেল পাথর ও গ্লাসে নির্মিত নতুন ভবনে ৫০ হাজার স্মারক সংরক্ষণের ব্যবস্থা আছে। এ ছাড়া তাতে যুক্ত হয়েছে পাঠকক্ষ, পর্যবেক্ষণ কক্ষ ও দুই শ আসনবিশিষ্ট সভাকক্ষ।
যা আছে পাঠাগারে : গাজি হুসরেভ বেগ পাঠাগারে আরবি, তুর্কি, ফারসি, বসনিয়ানসহ অন্যান্য ভাষার এক লাখ বই, পাণ্ডুলিপি ও নথি আছে। এর মধ্যে ঐতিহাসিক কয়েকটি পাণ্ডুলিপি হচ্ছে—
১. ইমাম গাজালি (রহ.)-এর ‘ইহইয়াউ উলুমিদ্দিন’ গ্রন্থের সর্বপ্রাচীন অনুলিপি।
২. হাফেজ সিরাজি (রহ.)-এর কবিতা সংকলন ‘দিওয়ানে হাফেজ সিরাজি’র অনুলিপি।
৩. আবদুর রহমান জামি (রহ.)-এর ‘তুহফাতুল আহরার’-এর অনুলিপি।
৪. আবদুস সালাম ইবনে মুহাম্মদ খাওয়ারিজমি (রহ.)-এর ‘ফিরদাউসুল আকবার বি-মাসরুরিল কাতিব’-এর অনুলিপি।
৫. বিজ্ঞানী ইবনে সিনার বিখ্যাত ‘আল-কানুন’-এর অনুলিপি।
এ ছাড়া বসনিয়ানসহ ইউরোপের বিভিন্ন ভাষায় রচিত ৩৫ হাজার বই আছে এই পাঠাগারে।
কোরআনের দুই বিশেষ পাণ্ডুলিপি : হুসরেভ বেগ পাঠাগারে সংরক্ষিত দুটি ঐতিহাসিক অনুলিপি হলো ‘জুঝ অব মেহমেদ পাশা সোকোলভিক’ ও ‘জুঝ অব বাগদাদ’। প্রত্যেক পারা আলাদাভাবে বাধাই করা বলেই এগুলোকে জুঝ বলা হয়। ‘জুঝ অব বাগদাদ’ খ্রিস্টীয় ১৬ শতাব্দীতে বসনিয়া অ্যান্ড হার্জেগোভিনার বানজালুকায় অবস্থিত ফেরহাদ পাশা মসজিদের জন্য উপহার হিসেবে পাঠানো হয়েছিল। মেহমেদ পাশা সোকোলভিক ছিলেন ১৬ শতাব্দীতে নিযুক্ত উসমানীয় সাম্রাজ্যের ‘ভিজিয়ার’ (নির্বাহী কর্মকর্তা)। তিনি পাণ্ডুলিপিটি প্রস্তুত করতে সাহায্য করেছিলেন।
‘জুঝ অব মেহমেদ পাশা সোকোলভিক’-এর ২২টি জুঝ সংরক্ষিত আছে। এর সুরা ফাতিহা অংশটি স্বর্ণের প্রলেপে নকশা করা। দ্বিতীয়টিও বিখ্যাত ও ঐতিহাসিক ইসলামী ক্যালিগ্রাফিতে সজ্জিত, যা ইতিহাসে ‘বাগদাদ কোরআন’ নামে খ্যাত। অনুলিপিটি ১৪ শতকের শুরুতে ইলখানিদ শাসক উলজাইতুর পৃষ্ঠপোষকতায় বাগদাদে প্রস্তুত হয়েছিল এবং তাতে তুলনামূলক বড় ‘মুহাক্কাক’ বর্ণ ব্যবহার করা হয়েছে।
এ ছাড়া লাইব্রেরিতে আছে ১৬ থেকে ১৯ শতক পর্যন্ত প্রস্তুতকৃত কোরআনের একাধিক অনুলিপি। এগুলো মূলত বসনিয়ার বিভিন্ন মসজিদের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছিল। এসব অনুলিপি উসমানীয় ক্যালিগ্রাফি শিল্পীদের উচ্চ শিল্পবোধ ও স্বাতন্ত্র্যের সাক্ষ্য বহন করে।
তথ্যসূত্র : ইসলামিক আর্ট ম্যাগাজিন ডটকম, ইউনিভার্সিটি অব সারাজেভোর ওয়েবসাইট ও উইকিপিডিয়া